সারমেয় যেখানে বাঘ তাড়ায় | Tibetan Mastiff

তিব্বতী মাসটিফ কুকুর
"ছোটবেলায়, এরকম শীতকালের সময়ে,যখন আমাদের মফস্বল এলাকায় বিলাতি-দেশি সার্কাস হতো তখন বাঘ সিংহের খেলা দেখবার জন্য ভিড় জমাতাম।তখনকার দিনে আজকের মতন বাঘ সিংহের খেলা দেখানোতে কোনো নিয়ম নিষেধাজ্ঞা ছিলোনা। আর আমার চোখে কোনোদিন ভয়ংকর কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি সার্কাস দেখার সময়। কিন্তু পরবর্তীকালে একটা বিষয় খেয়াল করলাম, যে সার্কাসদল তল্পিতল্পা নিয়ে চলে যাওয়ার পরে এলাকায় অনেক কুকুরদের হদিশ পাওয়া যেতোনা। অনেক ছোটছিলাম বলে তখন জানতে পারিনি, পরে জানতে পারলাম সার্কাস কতৃপক্ষ খাবার যোগান দিতে গিয়ে অনেকসময় এলাকার কুকুরদের দিয়ে কাজ মেটান। কখনো হত্যা করে বা অনেক সময় জীবন্ত অবস্থাতেই  বাঘ-সিংহের খাঁচায় পুড়ে দেয়া হতো, বাকিটার বিবরণ না করাই মঙ্গল।" কুকুর কোনোদিন বাঘ সিংহের মতন হিংস্র জন্তুদের সামনে জিততে পারেনা, আর এখানেই আমি একদিন ভুল প্রমাণিত হলাম। তিব্বত, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপাল এবং ভারতের কিছু পার্বত্য এলাকার বাসিন্দারা কুকুরের সাহায্যে তাদের গৃহপালিত পশুদের নেকড়ে, চিতাবাঘ, ভালুক, বুনো Mustelid এবং বাঘ থেকে রক্ষা করে থাকেন। এই বিশেষ প্রজাতির সারমেয় জাতি  THE TIBETAN MASTIFF নামে জগৎ বিখ্যাত। Tibetan Mastiff  শুধুমাত্র পৃথিবীর অন্যতম বৃহদাকার কুকুর নয় একটি বিরল প্রজাতিও বটে। এই সারমেয়রা হিংস্র মাংসাশীদের তাড়ানোর কাজ ভীষণ সাহসিকতার সহিত নিপুনভাবে বহু বছর ধরে করে আসছে। দিনে প্রভুর বাড়িতে বা তার বাসযোগ্য নির্দিষ্ট স্থানে বাধা থাকলেও রাতে তাদের খোলা অবস্থায় রাখা হয়। পুরুষ মাস্তিফের গড়ে উচ্চতা ২৬-৩৩ ইঞ্চি এবং ওজন ৫০-১১৫ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে, নির্ভরকরে তার আহারাদির ওপর। তাদের বিশাল দেহে থাকা বিশাল লোম দেখে এক নজরে সিংহ ভেবে ভুল করলে আশ্চর্য হবোনা। Tibetan Mastiff স্বাভাবিকভাবে পার্বত্য এলাকায় বেশি দেখা যায়, তাদের দৈহিক গঠন ও হিংস্র চারিত্রিক বৈশিষ্ট এমন দুর্গম জায়গায় তাদের বেঁচে থাকতে অনেকটাই সাহায্য করে। এই তিব্বতী মাসটিফকে  আদিম কুকুরের জাতি হিসাবে গণ্য করা হয়। বুদ্ধিমান হওয়ার সাথে সাথে তারা রীতিমত জেদি হয় যার জন্যে ছোট অবস্থাতেই সঠিক আনুগত্য প্রশিক্ষণ(Obedience training) দেওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়। এদের স্বাভাবিক আয়ু গড়ে ১০-১৬ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।

"তিব্বতের কুকুররা ভারতীয় কুকুরের থেকে আকারে দ্বিগুন, তাদের মাথা এবং দেহের দিক থেকেও। এরা শক্তিশালী জন্তু এবং শোনা যায় যে এরা বাঘের সঙ্গে লড়ার মতন ক্ষমতা রাখে। দিনে তাদের শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়, আর সারারাত এদের ছেড়ে রাখা হয় তাদের প্রভুর বাড়ির রক্ষা করার জন্যে" - ১৮৭২ সালের লেখা এই বিবরণ সেই সময় দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পরে,আর  মানুষ জানতে শুরু করে এই ভয়ংকর বিশালাকার কুকুরে সম্বন্ধে। ২০শে দশকে, King George V একজোড়া Mastiff প্রথম ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন এবং ১৯০৬ সালে THE CRYSTAL PALACE-এ এদের দেখানো হয়। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের সময় এই কুকুরের সংখ্যা England এ প্রায় কমে যায়। ১৯৮০ সালের পরে পাকাপাকি ভাবে Tibetan Mastiff এর বংশ পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ২০০৮ সালে Tibetan Mastiff প্রথমবার  Westminster Kennel Club Dog Show প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। ২০১৩ সালে চীনের Luohe-এর  একটি চিড়িয়াখানায় এই কুকুরকে আফ্রিকান সিংহ হিসাবে প্রদশন করা হয়েছিল। একটি Tibetan Mastiff এর ছানার দাম $1500 থেকে  $5000 ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১.৫ লক্ষ থেকে ৩.৫ লক্ষ)। তবে এতেই আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এক জনৈক চৈনিক মহিলা একবার ৪ কোটিরও বেশি মুদ্রা ব্যায় করেছিলেন একটি ১৮ মাসের বিশুদ্ধ-জাতির পুরুষ Tibetan Mastiff কেনার জন্যে, কুকুরটির নাম রাখা হয় YANGTZE । ২০১১ সালের মার্চ মাসে একটি লাল রঙের Tibetan Mastiff উত্তর চীনের একজন কয়লাখনির মালিকের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা দিয়ে বিক্রি করা হয়। শেষমেশ অনেক কুকুরপ্রেমীরাই স্বীকার করে থাকেন যে, কোনোরকম শত্রুর হৃদকম্প বন্ধ করার জন্যে Tibetan Mastiff একটি অনবদ্য বস্তু। 

Comments

Followers