আমরা সাধারণত নতুন কোথাও যাওয়ার আগে সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখে নিতে ভুল করিনা। বিশেষ সতর্কতার জন্যে আমরা গন্তব্যস্থল চেনার Landmark টিও লিখেনি। ভেবে দেখুন একবার,মানুষের তৈরী শহরে যেখানে সব কিছু খুঁজে পাওয়া সম্ভব সেখানেও রাস্তা হারিয়ে ফেলার ভয়ে Landmark নিতে যখন ভুল হয়না তখন ৮৮৪৮ মিটার (২৯,০৩৫ ফুট)উঁচু দুর্গম মাউন্ট এভারেস্ট চড়তে গিয়ে সেখানকার Landmark নথিভুক্ত করতে ভুল হবে কি করে। মাউন্ট এভারেস্টে চড়ার ও নামার নির্দিষ্ট পার্বত্য পথ আছে, যেটা কোনোভাবে ভুলে গেলে আরোহণকারীদের ফেরত আসার কোনো সম্বাভনা থাকেনা। ১৯৫৩ সালে এডমান্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে প্রথম মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় সফল ভাবে আরোহন করেন। তারপর থেকে তাদের পথ অনুসরণ করেচলেছেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা ৪০০০ এর ও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে অনেক আরোহী দুর্গম আবহাওয়া এবং পথের জন্যে পর্বত ছেড়ে নিচে আসতে সক্ষম হননি। ১৯২৪ এর পর থেকে আনুমানিক ৩০০র বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এই মাউন্ট এভারেস্ট , বর্তমানে তাদের অনেকেরই শবদেহ হয়ে উঠেছে মাউন্ট এভারেস্ট এ ওঠার পথ নির্ণয়কারী Landmark. সেই সব মৃতদেহ দেখে সঠিক ভাবে দিক নির্ণয় করে আজ এভারেস্ট এ ওঠার চেষ্টা করেচলেছে হাজার হাজার মানুষ। মৃতদেহের অনেকেরই যেমন পরিচিতি পাওয়া গেছে অনেকের পাওয়া সম্ভব হয়নি, অনেক শবদেহ ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের দেশে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনা দুর্গম পার্বত্য পরিস্থিতি এবং ব্যয় বহুল উদ্যোগের জন্যে। পর্বতারোহীদের Standard Protocol অনুযায়ী যেসব আরোহী যেখানে মারাযায় তাদের সেখানেই রেখে দেয়া হয়, যাতে পরবর্তীকালে পর্বতারোহীরা সেসব দেখে সতর্ক হতে পারেন এবং বিপদজনক মাইলকে চিহ্নিত করতে পারেন। ভীষণ ঠান্ডা থাকায় সেই শবদেহগুলি অনন্তকাল ধরে অক্ষত আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু Landmark এর ব্যাপারে আপনাদের জানাই।
|
Green Boots ওরফে Tsewang Paljor |
Green Boots
সব থেকে বিখ্যাত মৃতদেহটির এমন নাম হওয়ার কারন তার পরিহিত কচি-কলাপাতা রঙের বুট। মৃতদেহটি সরিয়ে ফেলার আগে বেশিরভাগ আরোহীদের এই Landmark এ এসে নিকটবর্তী একটি গুহাতে বিশ্রাম নিতে হতো এবং পরে এটি পেরিয়ে উপরের আরো দুর্গম পথে অগ্রসর হতে হতো।যারা সেই গুহাতে থেকেছেন তারা অনায়াসেই সামনে পরে থাকা Green Boots কে অলক্ষ করতে পারেননি। ২০০৬ সালে সেই একই স্থানে আরো একজন পর্বতারোহী মারা যান, মাটিতে বসে থাকা অবস্থায়, দুটি হাত হাঁটুর উপরে রাখা। অনেকে
Green Boots কে
Tsewang Paljor নামক একনজন ভারতীয় পর্বতারোহী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন যিনি ১৯৯৬ সালে সেখানে নিখোঁজ হন।
|
George Mallory অবশিষ্ট দেহ |
George Mallory
এককালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক, ইংল্যান্ড এর বাসিন্দা
George Mallory র মৃতদেহ আবিস্কার করা হয় তার মারা যাবার ৭৫ বছর পর। ১৯২৪ সালের এক গ্রীষ্ম-বসন্ত ঋতু তে তার মৃত্যু হয়েছিল তা অনুমান করেন বিষেশজ্ঞরা। তার অক্ষত মৃতদেহ ১৯৯৯ সালে খুঁজে পান অন্যান্য আরোহীরা। মনে করা হয় তিনি সর্বপ্রথম মানুষ যিনি মাউন্ট এভারেস্টে চড়েছিলেন কিন্তু সেই শিরোনাম আদৌ তার জন্য মানানসই কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। পর্বতের একদিক থেকে আরেকদিকে দড়ির সাহায্যে যাওয়া সময় পরে গিয়ে তার মৃত্যু ঘটে এমনটা তার দেহে থাকা ক্ষতচিণ্হ দেখে আন্দাজ করা হয়।
|
Hannelore Schmatz |
Hannelore Schmatz
ইনি ছিলেন জার্মানির প্রথম মহিলা যিনি এভারেস্টে উঠতে গিয়ে প্রাণ হারান। মাউন্ট এভারেস্টের সবথেকে ভয়ংকর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে হান্নেলোর স্মাৎজ এর Landmark অন্যতম। তিনি সফলভাবে মাউন্ট এভারেস্টে চড়তে পেরেছিলেন ঠিকই কিন্তু নিচে ফেরত নামার সময় Death Zone সীমার মধ্যেই ক্যাম্প করেন, তার শেরপার কথা অমান্য করে। ফলসরূপ Oxygen এর ঘার্তি এবং Frostbite এর দরুন তিনি মারা যান। তার স্থান থেকে Base Camp এর দূরত্ব ছিল মাত্র ৩৩০ ফুট। পরবর্তীকালে তার দেহ উদ্ধারকার্যে যাওয়া ২জন পর্বতারোহীদের মৃত্যু ঘটে মাউন্ট এভারেস্টেরই কোনো জায়গায়।
সবথেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে মাউন্ট এভারেস্ট চূড়ায় চড়ার সাফল্য হার মাত্র
২৯% হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছর শত শত পর্বতারোহীরা মাউন্ট এভারেস্ট এ চড়ার জন্যে অনুমতি পেয়ে যান। প্রতিবছর এভাবেই অনেক পর্বতারোহীরা হয় তাদের গন্তব্যে পৌঁছনোর সাফল্য পেয়ে থাকেন অথবা মৃত্যুবরণ করে Landmark অবস্থায় অন্যদের পথপ্রদর্শন করেন।
Comments