জীবন্ত রোবট

অনেক যুগ ধরে আমরা রোবট বলতে যা বুঝে-শুনে এসেছি তাতে এই  বৈশিষ্ট্যগুলি খুবই সুস্পষ্ট, রোবটদের কোনোরকম ইচ্ছেশক্তি থাকেনা, যেকোনোরকম কাজ করতেই তাদের একপ্রকার আদেশের প্রয়োজন। আদেশ না পেলে রোবট চালিত অবস্থায় থাকলেও এক তিল এদিক থেকে সেদিক নড়তে চাইবেনা। রোবটকে কার্যকারী রাখতে তাকে নিয়মিতভাবে বৈদ্যুতিক শক্তি প্রদান করতে লাগে। শক্তির অভাবে সে বিকল হয়ে থাকতে পারে কিন্তু সেটি চিরতরে সেই অবস্থায় থাকেনা অর্থাৎ একটি বিকল রোবটকে মেরামত বা প্রয়োজনীয় বৌদ্যুতিক শক্তি প্রদান করলে সে আবার নিজের "জীবিত" অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। ২০২০ সালে এই রোবটের নিয়মাবলীতে কিছু ব্যতিক্রম দেখা দিয়েছে আর তা সম্ভব হয়েছে মানুষের একটি অভূতপূর্ব আবিষ্কারের  দ্বারা। অনেক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম, জল্পনা-কল্পনা,পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার  ফল হচ্ছে মানুষের তৈরী এই প্রথম রোবট যা নিজের থেকে জীবিত এবং একপ্রকার স্বতন্ত্র, তার নাম "XENOBOT"
XENOBOT (সৌজন্যে GOOGLE )
 মার্কিন যুক্তরাষ্টে অবস্থিত বিখ্যাত ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয় (University of Vermont) এবং TUFTS বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত Allen Discovery Center এর যৌথ উদ্যোগে আবিষ্কৃত এই রোবট-জীব, গবেষকদের বক্তব্য অনুযায়ী "একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরণের জৈবদেহ" যার আকার এক মিলিমিটার থেকেও কম, সম্ভবত ০.০৪ ইঞ্চি। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে আকার হিসাবে এই রোবট এতটাই ক্ষুদ্র যে মানুষের শরীরের অভন্তরের অচিরেই কোনো বাধাবিপত্তি ছাড়া ঘুরে বেড়াতে পারবে।কোনোরকম খাদ্য-রসদ ছাড়াই ঘুরে ফিরে, সাঁতরে বেঁচে থাকতে পারবে অন্তত এক সপ্তাহ।প্রয়োজন মতো অন্য রোবটের সাথে সংগবদ্ধ ভাবে একসাথে কাজ করতেও তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। নিজের ক্ষত নিজেই মেরামত করতে সক্ষম এবং সম্পূর্ণভাবে জীবাণুবিয়োজ্য(bio-degradable)। XENOBOT নির্মিত হয়েছে আফ্রিকান নখর ব্যাঙের ভ্রূণ থেকে নিষ্কাশিত stem cell এবং সুপার কম্পিউটার দ্বারা পরিকল্পিত অতীব ক্ষুদ্র যন্ত্র সমষ্ঠির দ্বারা। আফ্রিকার নখর ব্যাঙের বৈজ্ঞানিক নাম (Xenopus Laevis) থেকেই এই Xenobot রোবটের নামকরণ।"এগুলি কোনোরকম ঐতিহ্যবাহী রোবট বা নিয়মিত প্রাণীর কোনও প্রজাতি নয়। এটি শিল্পের একটি নতুন শ্রেণি। একটি জীবন্ত, প্রোগ্রামযোগ্য জীব।"- ভারমন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য গবেষক Joshua Bongard এই বক্তব্য পেশ করেন একটি সাংবাদিক সম্মেলনে।
লাল হৃদয় কোষ যা XENOBOT কে জীবিত রাখে (সৌজন্যে GOOGLE )
 Xenobot এমন সমস্ত কাজ করতে সক্ষম যা সাধারণত কোনো রোবট করতে পারবেনা যেমন অতীব ক্ষুদ্র আকৃতির বস্তু হবার জন্যে এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারবে, বোঝাই করে নিয়ে যেতে পারবে গুরুত্বপূর্ণ Drug এবং ঔষধ যা নির্দিষ্ট স্থানে প্রেরণ করতে পারলে অনেক দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারবে মানুষ। মানুষের শরীরে অসম্ভব থেকে অসম্ভবতর যেকোনো স্থানে গিয়ে কার্যসাধনের পরে XENOBOT কে বাতিল করে দিলে সে কোনোরকম বিষক্রিয়া ছাড়াই মিলিয়ে যাবে শরীরের মধ্যে, যার জন্যে Xenobot কে পরিবেশবান্ধব এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে । চিকিৎসা ছাড়াও এই রোবট-জীব তেজস্ক্রিয় আবর্জনা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে বা সমুদ্রের ভিতর থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক সংগ্রহ করা, বিভিন্ন রকম সামরিক কাজে  ব্যবহৃত হতে পারে এমনটাই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন বৈজ্ঞানিক এবং গবেষকরা। Xenobot খুলে দিতে পারে অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির এক নতুন দ্বার। নিরাময় হতে পারে জন্মগত ত্রূটি , টিউমারের কোষকে নতুন ভাবে প্রোগ্রাম করে তাকে স্বাভাবিক কোষে পরিবর্তন করা যেতে পারে, গুরুত্বর আঘাতমূলক ক্ষত বা অবক্ষয়জনিত রোগ কে নির্মূল করতে পারে এমনকি মোকাবিলা করতে পারে বার্ধক্যের সাথে অর্থাৎ একরকম চিরযুবক হয়ে থাকাটাও সম্ভব হতে পারে এই XENOBOT এর ক্ষমতার দ্বারা। বর্তমানে Xenobot কে নিয়ে গবেষকরা নানাপ্রকার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন যাতে এর ক্ষমতা সম্পর্কে আরো অসাধারণ তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়। সুদূর ভবিষ্যতে মানুষের জীবনে অনেক প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিতে চলেছে এই XENOBOT এমনটাই আশাবাদী হয়ে আছেন এই রোবট-জীবের গবেষকরা এবং হয়তো আজকের পর থেকে আমরাও।

Comments

Followers