১৮ দশকের দিকে একটি কাঠের চেয়ার হয়ে উঠেছিল সেই সময়ের ইংল্যান্ডবাসীদের ভীতি এবং আশ্চর্যের কারণ। এতটাই ভীতি জন্মেছিলো যে সাহস করে কোনো ব্যক্তি সেই সুন্দর আরামদায়ক কাঠের চেয়ারে বসতে চাইতেন না। আর যারা সাহস করে বসেছিলেন তারা অকস্মাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার কারনে মৃত্যু লাভ করেছিলেন । এমনি মৃত্যুর আমন্ত্রণ দিতে সক্ষম ছিল এই চেয়ার। তবে শুরু থেকেই এই বস্তুর এমন ভুতগ্রস্ত শক্তি ছিলোনা, একসময় এটিতে বসতেন ইংল্যান্ডের একজন কুখ্যাত মাদকাসক্ত জাল মুদ্রা প্রস্তুতকারক ব্যক্তি। আর এই কাঠের চেয়ারটি ছিল তার খুবই প্রিয় একটি জিনিস, যেটা ব্যবহার করার অধিকার তিনি কাউকে দিতে প্রস্তুত ছিলেননা। বর্তমানে
"Busby's stoop chair" নামে পরিচিত এই চেয়ারের ইতিকথা শুরু হয় আনুমানিক ১৭০২ সালে, ইংল্যান্ডের উত্তর য়র্কশায়ার অঞ্চলে।
Thomas Busby তার সুন্দরী প্রেমিকা
Elizabeth Auty-কে বিয়ে করার বন্দোবস্ত করছেন কিন্তু তাদের এই বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন মেয়ের পিতা। স্বাভাবিকভাবে তিনি সমাজের কুখ্যাত মুদ্রা জালিয়াতকারী মাতাল গোছের বদ ব্যক্তির বিষয়ে আগেই অবগত ছিলেন, চারিত্রিক সব বৈশিষ্ট জেনেও এরকম এক ব্যক্তির সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে কোনো পিতাই রাজি হবেন না। কিন্তু মেয়ের জেদের কাছে তাকে হার মানতে হয়েছিল। বিয়ের পরেও মেয়েকে তার পিতা অনেক বার বোঝাতে চেষ্টা করেছিলেন যে Thomas Busbyর থেকেও শতগুণে ভালো ভদ্র এবং সম্মানীয় পুরুষমানুষ পৃথিবীতে আছে সুতরাং Busby কে আজীবন কালের জন্য জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নেওয়া বিশাল বড় ভুল ছাড়া আর কিছুই নয়। একদিন Thomas Busby ঘরে ফিরে এসে লক্ষ করেন যে তার শ্বশুরমশাই তারই প্রিয় চেয়ারে বসে আছেন।আসার কারন জানতে চাইলে শ্বশুর মশাই স্পষ্ট বলেদেন যে তিনি তার মেয়ের জন্যে সুযোগ্য পাত্র পেয়েছেন এবং মেয়েকে Thomas Busby -র কাছ থেকে ফেরত নিয়ে যেতে এসেছেন। মাদকাসক্ত অবস্থায় থাকা Thomas Busby এই প্রস্তাবকে মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় বচসা শুরু হয় দুজনের মধ্যে। উত্তেজিত এবং অগ্নিশর্মা হয়ে Busby হাতে তুলেনেন একটি হাতুড়ি আর সেটি দিয়ে তার শ্বশুরের মাথায় আঘাত হানেন, যাতে তার শ্বশুরের নিশ্চিত মৃত্যু ঘটে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhd1OWb6HGx5ska-mNy7wAez-gVGIrUX_1yZfhYIAsvd5hEttQTYA6PHONfHigreh12ySM26LMa6MGTOJhHsD6Z3ViP6cpG30RXHHgUNJdxdNhUrSPihf6yruUyqPpNKquZDBLe8TLR1Dsu/s320/Thomas-Busby-Chair-1024x768.jpg) |
"Busby's stoop chair" সৌজন্যে Thirsk Museum |
স্ত্রী যাতে এইসব বিষয়ে কিছু ঠাহর না করতে পারেন তার জন্যে শ্বশুরের মৃতদেহটিকে Busby কাছের ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে রেখে দিয়ে আসেন । অনেক দিন পরে নিজের বাসস্থানকে একটি সরাইখানা হিসাবে রূপান্তরিত করে ব্যবসা শুরু করেন Thomas Busby এবং সেই সরাইখানার নাম রাখেন "Busby Stoop Inn"। তার প্রিয় চেয়ারটিও সেই সরাইখানায় থাকার জায়গা পায়। কিছুদিন পরে স্থানীয় পুলিশ জঙ্গল থেকে মৃত বৃদ্ধ Auty অর্থাৎ Busby-র শ্বশুর মশাইয়ের দেহ উদ্ধার করেন এবং বিভিন্ন তদন্তের উপর ভিত্তি করে খুনি হিসাবে Busby কে গ্রেফতার করা হয় । সরাইখানা থেকে গ্রেফতার হবার সময়ে Busby ক্রুব্ধ স্বরে তার দিকে তাকিয়ে থাকা জনগণদের নিষেধ করে যান যাতে কেউ যেন তার প্রিয় চেয়ারে বসার সাহস না দেখায়।
১৭০২ সালে, বিচারে Busby-র মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয় এবং সেটি জনসমক্ষের সামনে। কাছেরই একটি ফাঁসিকাঠে তাকে ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল কয়েকদিন ধরে। খোলা অবস্থায় থাকা বীভৎস বিকৃত Busby-র মৃতদেহের দিকে তাকালে দর্শনার্থীর হার হিম হয়ে যেত। যদিও সেই সময়ে এইভাবে কুখ্যাত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে রাখার রীতি ছিল যাতে কৃত অপরাধের ফল কি সেটা দেখে জনগনেরা ভীত থাকে এবং সেই অপরাধ পুনরায় করবার দুঃসাহস যেন কেউ না প্রদর্শন করে । Busby-র মৃত্যর পর থেকেই শুরু হয় সেই চেয়ারের লীলাখেলা। সরাইখানায় সেই চেয়ারে যিনি বসবার উপক্রম করতেন যেকোনো কারণে তার মৃত্যু ঘটতো, প্রথমে ব্যাপারটি কাকতালীয় মেনে উড়িয়ে দিলেও যখন স্থানীয়বাসীন্দারা লক্ষ করলেন যে কোনো একটি মাত্র এমন ব্যক্তি বাকি নেই যিনি সেই চেয়ারে বসে থাকার পরেও এখনো বেঁচে রয়েছেন তখন সবাই বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন। Busby-র সাবধানবাণী এড়ানোর ফল যে কি ভয়ঙ্কর তা সবাই বুঝতে শুরু করলেন এবং সেই চেয়ারটিকে এড়িয়ে যেতে লাগলেন।
১৯৬৮ সালে
Busby Stoop Inn এর মালিকানা পেলেন
Tony Earnshaw এবং তাকে পূর্ববর্তী কর্তারা Busby র প্রিয় চেয়ারের বিষয়ে আগাম সতর্কবার্তা জানিয়ে দিলেন। কিন্তু Tony Earnshaw ছিলেন কুসংস্কারহীন এবং বিদ্রোহী প্রকৃতির তাই প্রায় দীর্ঘ ৩০০বছরের কিংবদন্তি ঘটনা কে নেহাত মনের ভুল কিংবা কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিলেন।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEitm2tgkZHNXzSpotRMaFcWa3zPEKsXff3iP5fUlWnAqHFAGsE8OA_F4pfPMRda620waROieV15hlidHjj6mF01EytYNZWkRJWdALv7aIokZGQ0aR2dxSq66se4dQn8ld0rdp8EDPX15WZM/s320/450_315_chair.jpg) |
"Busby's stoop chair" লিফলেট সৌজন্যে Thirsk Museum |
তার এই ধারণাও পাল্টে গেলো যখন সেই সরাইখানায় রাখা চেয়ারের দ্বারা হওয়া মৃত্যু তার নিজের চোখে ধরা পড়লো। একটি স্বাভাবিক দিনে Earnshaw লক্ষ করলেন যে সরাইখানায় দুজন Royal Air Force এর বৈমানিক নিজেদের মধ্যে বাজি ধরে সেই অভিশপ্ত চেয়ারে এক এক করে বসার চেষ্টা করছেন। সেইদিন কোনো অঘটন না ঘটলেও পরবর্তীদিনে সেই দুইজন ব্যক্তি একটি ভয়ানক গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। Earnshaw বিচলিত হলেন ঠিকই কিন্তু এখনো পাকাপাকি ভাবে চেয়ারটিকে অভিশপ্ত বলে মানতে পারলেননা। দিন কিছু পরে একদল বাড়ি নির্মাতা সেই সরাইখানায় আসলেন। দলে থাকা একটি তরুণ শ্রমিককে সেই অভিশপ্ত চেয়ারে বসে নিজের সাহসের প্রমান দিতে জোর করলেন দলের বাকি লোকেরা। তরুণ শ্রমিকটি চেয়ারের দুষ্ট ক্ষমতার বিষয়ে অবগত ছিলোনা তাই সে স্বচ্ছন্দে সেখানে আসন গ্রহণ করল এবং সেইদিনই তার কর্মস্থলে কাজ করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর ভাবে প্রাণ হারালো । উঁচুতলায় কাজ করতে গিয়ে সে হঠাৎই পরে যায় এবং নিচে কংক্রিট মেঝেতে আছড়ে পরে তার মাথার খুলি ফেটে বেরিয়ে আসে। এই ঘটনার পরে Earnshaw পুরোপুরি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন এবং তিনি Thirsk Museum কে অনুরোধ করেন যে তারা যেন এই চেয়ারটি তাদের অন্য সংগ্রহের সাথে রেখে দেন। তিনি কর্তৃপক্ষদের এমন বন্দোবস্ত করে দেবার জন্য অনুরোধ করেন
যাতে কোনো ব্যক্তি কোনোভাবে এটিতে বসতে না পারে । ইংল্যান্ড এর Thirsk Museum এ তবে থেকে সেই চেয়ার দর্শনার্থীদের জন্য বিরাজমান, তবে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্যে মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষরা চেয়ারটিকে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কয়েকশো বছর ধরে কাঠের সেই চেয়ারটি তার একমাত্র মালিক Busby ছাড়া আর কাউর অধীনত্ব হওয়া পছন্দ করে নি, হয়তো আর কোনোদিন করবেও না।
Comments