POMPEII | পম্পেই

বর্তমানে পম্পেই ধ্বংসাবশেষ

১৭৪৮ সালে, যখন একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতালির Naples এর কাছে একটি স্থানে খনন কার্য শুরু করেছিলেন , তখন তারা নিজেরাও জানতেন না যে  মাটির নিচে অপেক্ষা করছে একটি বিশাল উন্নতমানের শহর যা একসময় জনবহুল, সমবৃদ্ধ  এবং রোমান বিত্তশালীদের প্রিয় ছুটি কাটানোর স্থান ছিল। ইতালির  ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির পাদদেশ থেকে মাইল পাঁচেক দূরে অবস্থিত পম্পেইয় (POMPEII) ছিল সেই সময়ের অর্থাৎ ৮ই দশকের একটি অতন্ত উন্নত মানের বিলাস বহুল স্বাধীনচেতা সুন্দর শহর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক বন্দর। প্রচুর সুসংগঠিত বাড়ি, বাজারহাটের স্থান, প্রাসাদ, মন্দির, নানানরকম কারিগরখানা, পাকা রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বিলাস বহুল পতিতালয়, স্নানাগার, রকমারি ভিলা, খেলার অঙ্গন, সরাইখানা সব মিলিয়ে পম্পেই ছিল অসাধারন জমজমাটি শহর যা সেই সময়কার বিত্তশালী রোমান ভ্রমনবিলাসী এবং অন্যান্য ভ্রমণকারীদের আকৃষ্ট করতো। ২০,০০০ জন দর্শক একসাথে বসে খেলা দেখতে পারবেন এমনটা বৃহৎ ক্রীড়াঙ্গন সেই সময় পম্পেইর শহরে অবস্থিত ছিল, এমনটাও প্রমান পাওয়াযায়। একটি ইতিহাসে পাওয়া  স্থানীয় পন্ডিতদের লেখা বিবৃতি অনুযায়ী সেই সময়কার পম্পেইতে বসবাসকারী জনগণদের সংখ্যা ছিল ১২০০০ এর ও বেশি। কিন্তু ১৭৪৮ সালের আবিষ্কারের আগে এই নামজাদা ঐতিহাসিক শহরের বিষয়ে তেমন কোনো বিস্তারিত বিবরণ মেলেনি । এককালে নামজাদা শহর কিভাবে কয়েককদিনের মধ্যে শুন্য হয়েগিয়েছিল সেই খবর তেমন কেও জানতেননা। কেনো  পরবর্তীকালে পম্পেই তে কেউ বাস করার জন্য আগ্রহ দেখায়নি বা সেই স্থানে নতুন শহর ও আর তৈরী হয়নি তার উত্তর খুঁজছিলেন ঐতিহাসিক মহল । খননকার্যে পাওয়া পম্পেই কে দেখে বিশ্বের মানুষ যতটা অবাক হয়েছিলেন ততটাই হতবাক হয়েছিলেন এর ধ্বংসের রহস্য জেনে।

দুর্ঘটনার আগের পম্পেই শহরের আঁকা চিত্র

এককালে গ্রীক ঔপনিবেশিকদের দ্বারা এই শহর তৈরী হওয়া শুরু হলেও পরবর্তীকালে রোমান প্রভাবে সেটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। একদিকে সারণও নদী এবং অন্যদিকে পার্বত্য পাদদেশ, সুন্দর মনোরম পরিবেশ এবং স্বাস্থকর আবহাওয়ার জন্যে ধীরে ধীরে এই পম্পেই জনবহুল হতে শুরুকরে। মাইল ৫ দূরে অবস্থিত মাউন্ট ভিসুভিয়াসের ব্যাপারে তখন কেউ জানতেননা, এবং এটাও মনে করা হয় যে সেইসময়ে "আগ্নেয়গিরি" বিষয়টির ব্যাপারেও কেউ অবগত ছিলেন না। ক্রমে সেই সব ভয়ঙ্কর বিপদের থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় শহর বেড়ে উঠতে থাকে। ২৪শে আগস্ট, ৭৯ A.D., রোমান অগ্নিদেবতা "ভালকান"(VULCAN ) এর ধর্মীয় উৎসবের পরেরদিন, আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস জেগে ওঠে। আগ্নেয় গিরি থেকে নির্গত মোটা ছাই ,পাথরখন্ড, লাভার সাথে বিষাক্ত গ্যাস নিমিষের মধ্যে শহরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আগ্নেয়গিরির এমন বিবরণ আগে কেউ জানতেন না এবং কেউ এর আগেই মাউন্ট ভিসুভিয়াসকে বিস্ফরিত হতে দেখেননি বলে সামলে উঠতে পারেননা। যে সময় তারা পালিয়ে উঠার চেষ্টা শুরু করতে যান, জানা যায় ততক্ষনে ২০০০ জনের বেশি মানুষ বিষাক্ত গ্যাসের কবলে পরে মারা যান,কিছু সংখক বেঁচে পালাতে পারলেও বিশাল শহর এবং তাতে থাকা নিরীহ শহরবাসী ১৯ ফুট মোটা আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে চাপা পরে মারাযান। ২০১০ সালে আয়োজিত বিভিন্ন পর্যবেক্ষনের দ্বারা জানা যায় শহরে ছড়িয়ে পড়া ছাইয়ের জন্যে শহরের  সেই সময় উত্তাপ ছাড়িয়েছিলো ২৫০ ডিগ্রী(250 °C) সেন্টিগ্রেড। এইরকম তাপমাত্রা যুক্ত প্রবাহিত উষ্ণতরঙ্গ তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটানোর জন্য যথেষ্ট, তিনি যদি কোনো ভবনের অভ্যন্তরে আশ্রিত থাকেন তাও তার বেঁচে থাকা অসম্ভব। আগ্নেয়গিরি থেকে সারণও নদীর   দিকে প্রবল হাওয়া বয়ে চলায় পুরো শহর এবং তার বসবাসকারীরা আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত ১২ ধরণের TEPHRA আস্তরণে দ্বারা পুরোপুরি আবৃত হয়েপড়েছিলেন যা ৬ ঘন্টা ধরে বৃষ্টিরূপে সেখানে বর্ষিত হচ্ছিলো।

"পম্পেইর শেষ দিন" -রাশিয়ান জনৈক শিল্পীর একটি আঁকা চিত্র 

পরবর্তীকালে  প্রায় হাজার বছর পরে ঐতিহাসিকরা এই শহর আবিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন গোটা স্থানটি  রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক কারনে প্লাস্টার আবৃত, ফলে প্রায় সমস্ত ঐতিহাসিক প্রমাণ প্রায় অবিকৃত এবং অক্ষত অবস্থাতে আছে। সেদিন সেখানে যে সমস্ত জীবজন্তু ও মানুষেরা মারা গিয়েছিলেন তাদের সকলেরই দেহ প্লাস্টার আবৃত অবস্থায় এখনো সেখানে রয়েছে। পম্পেইয়ের একজন পন্ডিত Pliny the Younger পম্পেইয়ের এই ভয়ানক ঘটনার একটি বিবরণ লিখে থাকেন কিন্তু সেটি সেই ঘটনার ২৫ বছর পরে। Pliny the Younger এর সম্পর্কে একজন কাকা এই ঘটনাস্থলে আটকে পরা মানুষদের বাঁচাতে গিয়ে নিজে মারাযান। এই ঘটনার পরে অগ্নিদেবতা VULCAN এর নাম অনুসারে "Volcano" বা "আগ্নেয়গিরি" নামকরণ হয়। Vulcan দেবতার রুষ্ঠ হবার কারন স্বরূপ এই ঘটনাটি ঘটে এই গুজবের জন্যে আসেপাশের বাসিন্দারা ১৫০০ বছর পর্যন্ত সেইস্থানে থাকতে কোনোরকম সাহস দেখাননি। নথিপত্র অনুযায়ী ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি ১৭০০০ বছর থেকে এই পর্যন্ত ৮বার বৃহতমানের অগ্নুৎপাত ঘটায় যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই ৭৯ A.D. র  পম্পেই ঘটনা।

১৯৪৪ সালের ভিসুভিয়াস অগ্নুৎপাতের চিত্র

এর পরে শেষবার তার লীলাখেলা ঘটে ১৯৪৪সালে। বর্তমানে শান্ত অবস্থায় থাকলেও এই আগ্নেয়গিরি বিপদমুক্ত নয়। পম্পেইর এই ভয়াবহ ঘটনার স্বাক্ষী পেয়েও এখনো আগ্নেয়গিরির পাদদেশে অবস্থিত বিস্তীর্ন ব্যস্ত নেপলস শহর যা সব সময়ে অজানা বিপদের জন্য অপেক্ষা করছে ।