বিড়াল আর ৭ বছরের Black Death মহামারী

১২৩২-৩৪ সাল নাগাদ, যখন পোপ নবম গ্রেগরী তার অনুসরণকারীদের আদেশ করেছিলেন শয়তানের সঙ্গী বিড়ালকে ইউরোপ থেকে নিঃশ্চিহ্ন  করবার জন্যে, তখন যদি তিনি জানতে পারতেন যে তার এই নির্বুদ্ধিতার ফল হতে চলেছে প্রায় সাত বছরের অস্বাভাবিক মহামারী,যা সমস্ত ইউরোপ তথা আশেপাশের মহাদেশে বিস্তার লাভ করে এবং যা ছিনিয়ে নেয় প্রায় ২০ কোটিরও বেশি প্রাণ। Black Death নামক এই plague শুরু হয়েছিল আন্দাজ ১৩৪৬ সালে এবং এটি ১৩৫৩ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল। শুধুমাত্র ইউরোপের্ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০% থেকে ৬০% মারা যায় এই রোগে। ১৪ দশকে  পৃথিবী জুড়ে মোট জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ৪৭ কোটি যা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫-৩৭ কোটিতে। যে জনসংখার ঘার্তি পূরণ করতে লেগেযায় আরো ২০০ বছর।

এই Plague এর জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে ত্বক এবং মাংস পেশী মৃত হয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে। সেই সময় কোনো রকম চিকিৎসা করে এই রোগ সরানো সম্ভব ছিল না। বেশিরভাগ জনগণ নিজেদের আত্মরক্ষা করেছিলেন দেশ ত্যাগ করে। সাধারণত বিড়ালের জনপ্রিয়তা বেশি দেখা যায় মিশরে।মিশরীয়দের কাছে বিড়াল খুবই জনপ্রিয় হবার কারন ছিল তাদের ইঁদুর শিকারের প্রবণতা। নীলনদের তীরে যখন চাষবাস করা হতো তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেঠো ইঁদুরদের শিকার করে খেত পোষা বিড়ালরা, আর তারা শস্য নষ্ট হাওয়া থেকে রক্ষা করতো।মিশরীয় অনেক দেবদেবীর মূর্তি তে বিড়ালের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পরবর্তীকালে, জনপ্রিয়তা এসে পৌঁছয় ইউরোপীয়দের কাছে।তারাও বিড়াল পুষতেন এবং তাদের সঙ্গে থাকতেও কোনো দ্বিধা করতেননা। পোপ নবম গ্রেগরীর বিড়ালের প্রতি এমন বিদ্বেষ থাকার কারন সঠিক জানা যায় নি, হয়তো নেপোলিয়ান বোনাপার্ট এর মতন তিনিও বিড়ালকে ভয় পেতেন। তিনি চেয়েছিলেন জার্মানির বড় একদল শয়তান উপাসকদের শায়েস্তা করতে যারা তাদের উপাসনায় কালো বিড়ালকে পুজো করতেন। আসনে উর্তীর্ণ  হয়ে তিনি জানিয়ে দিলেন যে সমস্ত দেশ থেকে যেন কালো বিড়াল মেরে ফেলা হয়, কিন্তু সেই প্রচার চলাকালীন স্বাভাবিক ভাবে কালো বিড়ালের সাথে সাধারণ বিড়ালের হত্যা করা শুরু হয়েছিল যা পরে ইতিহাসে Cat  Massacre নামে পরিচিত। সেই বছরের মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন শহর থেকে বিড়ালের চিহ্ন মুছে গেলো, আর কয়েক বছর কাটতেই স্থানীয় বসবাসকারী রা লক্ষ করতে শুরু করলেন একরকম কালো ইঁদুরের আবির্ভাব।
একটি চিত্রে আঁকা ব্ল্যাক ডেথ মহামারী
শহরের সমস্ত অপরিষ্কার জায়গায় এদের অবাধ যাতায়াত, ধীরে ধীরে তারা বংশবিস্তার করা শুরু করলো প্রবল ভাবে কারন তাদের নিধন করার জন্য যারা একসময়  শহরে ঘুরে বেড়াতেন তারা পোপের দয়াতে দেশ ছাড়া। প্রায় ১৪ দশকের মাঝামাঝি সেই সমস্ত ইঁদুর থেকে ছড়াতে  শুরু হলো একরকম বিষাক্ত কীট যা Black  Death  Plague এর জীবাণু বহনকারী। তখনকার দিনে দেশবিদেশে যাতায়াতের জন্যে  জাহাজ ব্যবহৃত হতো, ইউরোপের সেই জাহাজে অল্প বিস্তর ইঁদুর যাতায়াত করতো যারা পরবর্তী কালে অন্য দেশেও Black  Death  Plague ছড়ানোর ভূমিকা নিয়েছিল।
Plague  বহনকারী কীট
এভাবেই একসময় প্রায় সমস্ত পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পরে এই ভয়াবহ মহামারী। পোপ নবম গ্রেগরী যদিও তার নির্বুদ্ধিতার প্রমান দেখে যেতে পারেননি কিন্তু ইতিহাসে তার নাম সেই নির্বুদ্ধিতার জন্যই সর্বকালের জন্য খ্যাত থাকবে।তবে Black  Death  Plague যে খালি খারাপ করে গিয়েছে তা হয়তো সত্য নয়, কিছু শাপে বর ও হয়েছিল। ১৪ দশকের শেষের দিকে জনসংখা কমে যাওয়ায় জিনিস পত্রের দাম অনেক কমে যায়, জমির দাম সস্তা হয়ে পরে, শহরে কাজের সুযোগ বাড়ে, আগামী কয়েক বছর পর্যন্ত আর্থিক বিষয় বা বেকারত্ব নিয়ে ইউইরোপবাসীদের চিন্তিত থাকতে হয়নি।

Comments

Unknown said…
খুব ভাল । দারুন ইনফরমেটিফ । চালু রাখিস
Sudip Roy said…
Thank You very much :D

Followers