বিশ্বের দীর্ঘতম গুহা । সত্যি আশ্চর্য্যজনক

১৯৯১ সালে এই বিখ্যাত স্থানটির আবিষ্কার হয় খুবই অস্বাভাবিক ভাবে। হো কান নামক একজন ভিয়েতনামীয় স্থানীয় ব্যক্তি  সেখানকার জঙ্গলে গিয়েছিলেন কিছু শিকার করতে এবং গন্তব্যে যাওয়ার পরে হঠাৎই তিনি প্রবল বৃষ্টির কবলে আটকে পড়েন। একটি গুহার মতন স্থানে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে অপেক্ষা করার সময় হো কান লক্ষ করেন যে গুহার ভিতর থেকে প্রবল গর্জন এবং এক রকম শিশ দেবার শব্দ ভেসে আসছে। সেই শব্দ অনুসরণ করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেন পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক গুহা শোন্ ডং (Son Doong)। শোন্ ডং শুধুমাত্র যে একটি দীর্ঘ প্রাকৃতিক গুহা বলে প্রসিদ্ধ তা কিন্তু নয়! এই গুহার ভিতরে রয়েছে কিছু অতি প্রাচীন হ্ৰদ, জলপ্রপাত, ভূগর্ভস্থ নদী যা এই গুহার ভিতরে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্টি করেছে একটি বিশাল অরণ্যের । অভ্যন্তরীণ গুহায় থাকা বিলাসবহুল অরণ্যে বসবাস করছে নানা ধরণের বানর এবং শেয়াল, রয়েছে বিশাল আকারের  খেজুর ,ফার্ন এবং লতানো জাতীয় গাছপালা। বাহির থেকে আসা উজ্জ্বল প্রকাশ গুহার ছাদে থাকা শিলাখন্ডে প্রতিফলিত হয়ে গুহার ভিতরকে অপরূপভাবে আলোকিত করে রেখেছে। অবিচ্ছিন্ন মেঘ পুরো দৃশ্যকে আবদ্ধ করে রেখেছে যা গুহার নিজস্ব স্থানীয়ীকৃত আবহাওয়া ব্যবস্থার ফলাফল। গুহাটি এই পৃথিবীতে কয়েক লক্ষ বছর কাটিয়ে ফেলেছে তার প্রমাণ দেয় প্রাচীন জীবাশ্মের সাথে সজ্জিত গুহার বিভিন্ন অংশগুলি।  বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেও অনায়াসে একটি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র গঠন করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে এই গুহা। আরো অনেক অপরূপ দর্শনীয় বস্তু রয়েছে এই শোন্ ডং গুহাতে যা অল্প কথায় বর্ণনা করা কোনো দর্শনার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়। শোন্ ডং গুহা অবস্থিত লাওস ভিয়েতনাম সীমান্তের কাছে Quảng Bình অঞ্চলে, যার গভীরতা সর্বোচ্চ ১৫০ মিটার (৪৯০ ফুট) এবং দৈর্ঘ্যে আনুমানিক ৯ কিলোমিটার। ১৯৯১ সালে গুহাটি আবিষ্কার হলেও আন্তর্জাতিকভাবে পৃথিবীর মানুষের কাছে তার খবর এসে পৌঁছেছিল ২০০৯ সালে The British Cave Research Association এর একদল গুহা পর্যবেক্ষকদের সুবাদে। তাদের অভিযান বন্ধ করতে হয়েছিল ৬০ মিটার(২০০ ফুট) উঁচু flow-stone আবৃত দেওয়ালের জন্যে যাকে পরবর্তী কালে নাম দেওয়া হয় "The Great Wall of Vietnam"| ২০১০ সালে সেই দল এই দেয়ালটিকে অতিক্রম করতে সক্ষম হন এবং গুহার শেষ সীমান্তে পৌঁছান । এই গুহার বয়স ভূতাত্ব্যিকদের মতে  অন্তত ২০ থেকে ৫০ লক্ষ বছর,যা  পৃথিবীর অন্যান্য প্রাচীন গুহাগুলির মধ্যে অন্যতম। ২০১৩ সালের আগস্ট মাস থেকে আইনত ভাবে  শোন্ ডং এ পথপ্রদর্শকসহ  গুহা সফর শুরু করা হয় যার দাম পরে মাথা পিছু ৩০০০ মার্কিন ডলার। বলাই বাহুল্য যে শোন্ ডং-এ ভ্রমণ করার জন্যে বিশেষ অনুমতিপত্রের প্রয়োজন যা খুবই সীমিত মাত্রায় প্রদান করা হয়ে থাকে। ২০১৯-২০২০ সালের জন্যে মাত্র ১০০০টি অনুমতি প্রযোজ্য করা হয়েছে যা ফেব্রূয়ারি মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত চলে থাকবে কিন্তু আগস্ট মাসে হওয়া  প্রবল বর্ষণের দরুন নদীর জলস্তর বেড়েযায় এবং গুহাতে প্রবেশ করা দুস্কর হয়ে ওঠে। কথিত আছে যে, যত না মানুষ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় চড়তে পেরেছেন তার চেয়ে অনেক কমই দেখতে পেরেছেন শোন্ ডং গুহার সম্পূর্ণ অভ্যন্তর। শোন্ ডং গুহার অভন্তরীন স্থান এতটাই বৃহৎ যে এখানে বোয়িং ৭৪৭ প্লেন অনায়াসে উড়তে পারবে এবং যদি রাখার ব্যাপার হয় তাহলে ৬৮টি বোয়িং ৭৭৭ বিমান খুবই সহজে এঁটে যেতে পারবে এই গুহার পেটে । তবে এই অংকটি  আরও বড় হতে পারে কারণ বৈজ্ঞানিক এবং ভূতাত্বিকদের মতে, আজকের আধুনিকতম প্রযুক্তি এই গুহার আসল দৈর্ঘ্যটি এখনো সম্পূর্ণরূপে  অন্বেষণ করে উঠতে পারেনি। পর্যটকরা আসেন মুগ্ধ হতে এবং এই স্থান তাদের একবিন্দু নিরাশ করেনা , বরঞ্চ তারা এইস্থানের অস্বাভাবিক সুন্দর্য্য দেখে রীতিমতো চিন্তিত হয়ে পড়েন। প্রত্যেক পর্যটক যারা এখনো পর্যন্ত শোন্ ডং গুহায় পর্যটন করে এসেছেন তারা অচিরেই একটা কথা অকপটে মানতে রাজি "পৃথিবীর মধ্যে  যে এমন স্বর্গতুল্য স্থান  সত্যি আছে তা স্বপ্নেও কেউ ভাবতে পারবেনা!"
শোন্ ডং গুহার একটি অংশ 

Comments

Followers