শয়তান মুখো | Devil Face

সম্ভবত এটি ১৯ দশকের একটি কাহিনী। ইংল্যান্ডের একটি সম্ভ্রান্ত অভিজাত পরিবারে জন্ম নেন একজন প্রতিভাশালী বালক। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার বহুমুখী প্রতিভার কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে  ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্তে। দর্শনে তিনি যেমন সুপুরুষ সুশ্রী ছিলেন তেমনি ছিলেন মেধাবী এবং ভদ্র প্রকৃতির। একাধারে ছিলেন বিরল ক্ষমতা সম্পন্ন সঙ্গীতজ্ঞ  এবং অসাধারন কবি। এমন চারিত্রিক গুণ  এবং বৈশিষ্ট্যের জন্যে তাকে সমাজের সকলে যেমন খুবই শ্রদ্ধা  করতেন তেমন ভয় পেতেন একটি বিশেষ কারণে। সেই নির্দিষ্ট কারন যে শুধুমাত্র অন্য মানুষদের ভয় দেখাতো তা নয়, তিনি নিজেও সেই কারনে যথেষ্ট ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন, উদ্ভ্রান্তের মতো জেগে থাকতেন রাতের পর রাত । সেই সময়কার নামি-দামি চিকিৎসাশাস্ত্রের সাহায্য নিয়েও শেষ পর্যন্ত সেই দুরারোগ্য থেকে তাকে মুক্ত করা যায়নি । ভদ্রলোকের নাম ছিল  Edward Mordrake বা Mordake কিন্তু লোকজনের মাঝে তার সুপ্রসিদ্ধ নাম ছিল "Devil Face"। Edward -এর মাথার সামনে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক মুখমন্ডল থাকলেও তার ঠিক মাথার পিছনে ছিল আরেকটি ভয়ঙ্কর মুখমন্ডল। শুধু কদাকার দেখতে বলেই যে সব সময়ে মানুষ কোনো কিছু দেখে ভয়প্রকাশ করে তা কিন্তু নয়, অনেকসময় অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট দেখলেও মানুষ ভীত খুব সহজে হয়ে পরে। Edward -এর দ্বিতীয় মুখমন্ডল কথা বলতে পারতোনা ঠিকই কিন্তু হাসি কান্নার অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে সক্ষম ছিল যদিও সেই হাসি বা কান্না প্রকাশ পেতো যখন Edward -এর সম্মুখভাগ তার বিপরীত আবেগ প্রকাশ করতেন। তিনি যখন কাঁদতেন তখন তার দ্বিতীয় মুখ হাসতো এবং যখন হাসতেন  তখন সেই দ্বিতীয় মুখ করতো ঠিক তার উল্টোটি। এছাড়াও Edward অনেকবার জানিয়েছিলেন যে সব সময়ে সেই দ্বিতীয় মুখ তার সাথে ফিসফিস করে নানা রকম কথা বলে যেতে থাকে যা অত্যন্ত পিশাচ মনোবৃত্তির। রাতের পর রাত তিনি সেই ভৌতিক ফিসফিস কথার জন্যে ঘুমোতে পারতেন না। একসময় তিনি বিভিন্ন ডাক্তারি মহলে তার এই অস্বাভাবিক বিষয়টি তুলে ধরেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের সাহায্যে যাতে সেই দ্বিতীয় মুখটিকে  বাদ দিয়ে দেওয়া যায় তার জন্য কাতর অনুরোধ করতেও তিনি পিছ পা হননি। কিন্তু Edward Mordrake এর ঘটনাটি এমনি জটিল ছিল যে কোনোভাবেই চিকিৎসকরা এর সম্ভাব্য উপায় বের করতে পারেননি। নিজের এই সুরাহাহীন পরিস্থিতির ওপর একরকম তিতিবিরক্ত হয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে Edward Mordrake তার নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। ১৮৯৫ সালে Edward Mordrake এর এই অবিস্মরণীয় কাহিনী জনগণের সামনে তুলে ধরে "Boston Post" পত্রিকা, প্রবন্ধের লেখক ছিলেন Charles Lotin Hildreth।তার সেই প্রবন্ধে বিভিন্ন অদ্ভুত মানুষের কথা উল্লেখিত ছিল যাদের উৎপত্তি বা সৃষ্টির সঠিক ব্যাখ্যা বৈজ্ঞানিকদের দ্বারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৮৯৬ সালের অক্টোবর মাসে, দুইজন মার্কিন ডাক্তার যথাক্রমে George M. Gould এবং Walter L. Pyle চিকিৎসা জগতে ঘটে থাকা বিভিন্ন উদ্ভট দৃষ্টান্তের সংকলন হিসাবে একটি পুস্তক প্রকাশ করেন যার নাম দেন "Anomalies and Curiosities of Medicine" যাতে Edward Mordrake -এর কাহিনীও বিবৃত রয়েছে। একটি বিষয়ে আপনাদের আরো জানিয়েদি, এই মুহূর্তে যদি আপনি ইন্টারনেট এ Edward Mordrake লিখে তাকে খুঁজে বের করবার চেষ্টা করেন তাহলে একাধিক চিত্র খুঁজে পাবেন আর যার মধ্যে কোনটিও বাস্তবরূপে Edward Mordrake এর নিজস্ব চিত্র নয়, সবটাই কাল্পনিকভাবে কোনো শিল্পীর দ্বারা তৈরী। প্রচারের অভাবে তার বাস্তবিক চিত্র তেমন প্রচার পেতে পারেনি কিংবা হয়তো লোকেদের থেকে Edward Mordrake- এর এই ভয়াবহ বিষয়টিকে আড়াল রাখার জন্যে Mordake পরিবারবর্গ এমনটি হতে দেননি। 

Comments

Followers